ধাপে ধাপে নিচে দেখুন

জুয়ায় আসক্তি চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

জুয়া খেলা মানসিক রোগ। জুয়ায় আসক্তি একজন মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে। এ আসক্তির ফলে অন্য কোনো মানসিক রোগ বা আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যায়। প্রথম পর্বে জুয়ায় আসক্তির কারণ ও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল।

আজ দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে জুয়া আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জানাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব

জুয়া আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় : নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে- জুয়া আসক্তির বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকগুলো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আসক্ত মানুষজন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব মনে করতে চায় না বা মনে রাখে না। এই অভ্যাস বদলে ক্ষতিকর প্রভাব-লক্ষণ কিংবা পেছনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজে নিজে অন্তত এ সিদ্ধান্তে আসতে হবে- আমি জুয়া খেলা বাদ দিতে চাই। জুয়া থেকে মুক্তি পেতে চাই। যেহেতু চাহিদা এমন পর্যায়ে থাকে যেখানে নিজেকে বিরত রাখা কঠিন, তাই পেশাগত বা প্রফেশনালদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। তবে তার আগে- জুয়া নিয়ে নিজের সব অনুভূতি লিখে ফেলুন। পারলে নিজে অথবা অন্য কারো সাহায্য নিয়ে লিখতে পারেন। কখন-কিসে-কিভাবে-কেন জুয়া খেলার ইচ্ছা বেড়ে যায়, ভালোভাবে মনে করার চেষ্টা করুন ও পারলে লিখে ফেলুন। জুয়া বাদে অন্য আরো যেসব বিষয় আপনার অস্বস্তি তৈরি করছে, সেসব লিখে ফেলুন। কতবার কিভাবে জুয়া খেলা বন্ধ করতে চেয়েছেন; কিন্তু পারেননি, তার বিস্তারিত মনে করুন ও লিখুন। কেন পারেননি সেটাও লিখে ফেলুন। জুয়া বর্তমানে আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে তারও বিস্তারিত নোট করুন। জুয়ার বাইরে অন্য কোনো মানসিক চাপ, সমস্যা কিংবা বড় কোনো ঘটনা থাকলে সেটাও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। অন্য কোনো শারীরিক রোগ, নেশা বা ওষুধ খেয়ে থাকলে সেটাও লিস্ট করে ফেলুন।

চিকিৎসা ও সচেতনতা : চিকিৎসার আগে যে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি তা হলো এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি। সেটা আসক্ত মানুষটির জন্য যেমন, তেমনই সমাজের অন্যদের জন্যও প্রযোজ্য। আসক্তি বিষয় সম্বন্ধে ভালো করে জানাও জরুরি। কখন একজন মানুষকে কোন একটি বিষয়ে আসক্ত বলব। তার ক্ষতিকর দিকগুলোও জানা প্রয়োজন। এটিও জানা দরকার যেকোনো ধরনের আসক্তিই এক ধরনের মানসিক সমস্যা বা রোগ।

জুয়ার আসক্তি চিকিৎসা সহজ বিষয় নয়। বেশির ভাগ আসক্তরাই এটাকে কোনো সমস্যা হিসেবে মানতেই চায় না। যদি কেউ সেটা মেনেও নেয়, তবে সেটা চিকিৎসাযোগ্য বলে মানতে নারাজ। তাই আসক্ত, ক্ষতিকর দিক বা প্রভাব, চিকিৎসা, সর্বোপরি এটি একটি রোগ- এ বিষয়ে জানতে হবে।

মনে রাখা প্রয়োজন, জুয়ার আসক্তি ভালো করে চিকিৎসা করলে নিজের ওপর আবার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। সেই সঙ্গে হারানো সম্মান, অর্থ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, পেশা- সব কিছুতেই নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

চিকিৎসার প্রধান প্রধান ধাপ

সাইকোথেরাপি : আপনার অনিয়ন্ত্রিত চাহিদাকে কমিয়ে, সেসবের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে নেতিবাচক চিন্তাগুলো পরিবর্তন করে গ্রহণযোগ্য চিন্তা মনে স্থান করে নিতে সাহায্য করবে। রাগ, মেজাজকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সাইকোথেরাপি সহায়ক হবে।

ওষুধ : জুয়ায় আসক্তির পাশাপাশি অন্য কোনো মানসিক রোগ বা সমস্যা থাকলে সেখানেও ওষুধ কার্যকরী। ডিপ্রেশন, ওসিডি, নেশা কিংবা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার থাকতে পারে, যেসব চিকিৎসার আওতায় আনলে জুয়ার ব্যাপারেও সহায়ক হবে। আগে থেকে কোনো ওষুধ যদি 'মুড'-এর সমস্যা বাড়িয়ে দেয় সেসবও খেয়াল করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনমতো অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা মুডস্টেবিলাইজার যেকোনো আসক্তিতেই উপকারী।

সেল্‌ফ হেল্প গ্রুপ : এটি এক ধরনের বিশেষ গ্রুপ, যারা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করতে পারে। যাঁরা জুয়ায় আসক্ত বা আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করেছেন সেই ধরনের মানুষদের নিয়ে এমন গ্রুপ। যেখানে নিজেদের সমস্যা বা সমস্যামুক্ত হওয়ার বিষয়গুলো নিজেরা আলাপ করে সমাধানের পথ খুঁজতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, সব কিছু করার পরও একজন আবার আসক্ত হয়ে যেতে পারেন, যদি অন্য আসক্তদের সঙ্গে কিংবা আসক্ত হওয়ার মতো পরিবেশে সময় কাটান। এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য; যিনি আসক্ত ছিলেন তাঁর আবার আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিস্তারিত দেখুন .....